নারীদের প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানি কেন হয়?
নারীর যৌনাঙ্গে দেখা দেওয়া নানান সমস্যা নিয়ে আমরা অন্ধকারে থাকি বা খুব একটা পাত্তা দেই না। সেরকম একটি অবহেলায় থাকা অসুখ নিয়ে আজকের আলোচনা, যা হলো যোনির ফুসকুড়ি। বিশেষ করে গরমের সময়, নারীদের প্রস্রাবের রাস্তায় বা যোনির এলাকায় দেখা দেয় চুলকানি এবং ফুসকুড়ি। জেনে রাখা ভালো, আপনি যদি এই র্যাশগুলো বেশি চুলকান তাহলে তা আরও খারাপ হতে পারে।
যোনিপথে ফুসকুড়ির লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
- চুলকানি,
- জ্বালাপোড়া,
- ফুলে যাওয়া,
- ফোসকার মতো হওয়া,
- ক্ষত বা ঘা,
- বিবর্ণ ত্বক (লাল, বেগুনি বা হলুদ রঙ ধারণ করা),
- একটা এলাকায় ত্বক ঘন হয়ে যাওয়া,
- প্রদাহ,
- প্রস্রাব বা যৌন মিলনের সময় ব্যথা,
- স্রাব,
- যোনি এলাকায় গন্ধ,
- জ্বর,
- কোমরে বা কোমরের এলাকায় ব্যথা,
- ফুলে ওঠা লিম্ফ নোড।
বিভিন্ন কারণ যোনিপথে বা প্রস্রাবের রাস্তার চুলকানি, ফুসকুড়ি হয়। এগুলো হতে পারে দৈনন্দিন কিছু কারণে যেমন, আঁটোসাঁটো বা টাইট জামাকাপড় এবং অন্তর্বাস পরলে, যৌনাঙ্গের চুল কাটা বা ছ্যাঁচে ফেলার জফলে জ্বালাপোড়া, যৌনাঙ্গের চুল কাটার সময় তার গোড়ায় সংক্রমণ হলে, এবং স্থুলতার কারণে, যখন ত্বকের ভাঁজে ঘর্ষণ এবং ঘাম মিলেমিশে যোনিতে জ্বালা হয়।
তবে নারীর যৌনাঙ্গের ফুসকুড়ি, লাল হওয়া, চুলকানি জ্বালা পোড়ার পেছনে থাকতে পারে বিভিন্ন রোগ। চলুন সেগুল সম্পর্কে জেনে আসি।
যোনির চারপাশে ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো হলো কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস, ভ্যাজাইনাইটিস এবং বার্থোলিনের সিস্ট।
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস এক ধরনের অ্যালার্জি । এটি হয় যেকোনো অ্যালার্জি হওয়ার মতো বস্তু, কাপড়, সাবান, রাসায়নিকের মাধ্যমে। ভ্যাজাইনাইটিস হয় ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক বা প্যারাসাইটের সংক্রমনের জন্য। আর, বার্থোলিনের সিস্ট হলো যোনির মুখে ফোলা অংশ, যেখানকার গ্রন্থিগুলো তরল নিঃসরণ করে। এই সিস্টগুলো আহত বা সংক্রমিত হলে, পুঁজ হয়ে যায় এবং তার থেকে ফোড়া তৈরি হয়।
ভালভা বা যৌনাঙ্গের বহিঃঅংশে ফুসকুড়ি হতে পারে নিউরোডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, লাইকেন স্ক্লেরোসাস, হারপিস রোগসমুহ হলে। নিউরোডার্মাটাইটিসের সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে পোকামাকড়ের কামড় বা মানসিক চাপের কারণে এটি হতে পারে। এতে বারবার চুলকানোর মতো অনুভুতি তৈরি হয় এবং আমরা যত চুলকাতে থাকি, তত বাড়ে এবং ওই এলাকার চামড়া শক্ত হয়ে যায়।
সোরিয়াসিস হলো একটি অটোইমিউন রোগ যাতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো আমাদেরকেই আক্রমণ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে ভালভাতে সোরিয়াসিসের ক্ষত বেশি দেখা যায়। সহজ ভাষায় লাইকেন স্ক্লেরোসাস হলো যৌনাঙ্গের ত্বকের প্রদাহ, যেটি বেশ চুলকায়। এবং হারপিস হয় ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে।
লেবিয়া বা যৌনাঙ্গের যে মাংসল দুটি ঠোটের মতো অংশ রয়েছে তাতে ফুসকুড়ি, ফুলে যাওয়া এবং লাল হওয়ার জন্য অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট বা ট্রিক পরজীবির সংক্রমণ, অথবা যৌনমিলনের সময় লুব্রিকেশন বা তরলের অভাবকে দায়ী করা যেতে পারে।
যোনিপথের এই সমস্যাগুলো ওষুধ এবং ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে। সবক্ষেত্রেই যে ঘরোয়া ওষুধে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হবে এমনটা নয়, তবে লক্ষণগুলো ওষুধ দিয়ে উপশম করা যেতে পারে। তাই আপনার ফুসকুড়ি হলে একজন গাইনি ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। অবহেলায় রোগ আরো জটিল রূপ ধারণ করতে পারে, অথবা আপনার সন্তান এবং সঙ্গীর ক্ষতি হতে পারে।
Leave a Reply